ঢাকা,শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪

ফ্রুট ব্যাগিং আমে নওগাঁয় ২৫০ কোটি টাকা বাণিজ্যের আশা

উত্তরের জেলা নওগাঁ এখন ধানের পর আমেও সমৃদ্ধ। স্বাদে সেরা হওয়ায় দেশ-বিদেশে এ অঞ্চলের আম সুনাম কুড়িয়েছে। দুই সপ্তাহ ধরে জমে উঠেছে জেলার সবকটি আমের বাজার। যেখানে ২ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হবে বলে আশা কৃষি বিভাগের। তবে সবচেয়ে বেশি সাড়া ফেলেছে ফ্রুট ব্যাগিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত নিরাপদ আম। এ মৌসুমে জেলায় উৎপাদিত ২৫০ কোটি টাকার নিরাপদ আমের চাহিদা সৃষ্টি হয়েছে দেশীয় সুপার শপ ও বিদেশে। এতে লাভবান হচ্ছেন আমচাষীরা। এ বাণিজ্যের প্রসার ঘটাতে জেলায় আমকেন্দ্রিক সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান নির্মাণের দাবি জানিয়েছেন তারা।

এ বিষয়ে কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর জেলার ১১টি উপজেলায় ৩০ হাজার হেক্টর জমিতে আম্রপালি, নাক ফজলি, ল্যাংড়া, হাড়িভাঙ্গা, খিরসাপাত, বারি-৪, ব্যানানা ম্যাংগোসহ দেশী-বিদেশী ১৬টি জাতের আম চাষ করেছেন চাষীরা। যেখানে সবচেয়ে বেশি চাষ হয়েছে আম্রপালি আম। এ মৌসুমে জেলায় আম্রপালি জাতের আমবাগানের পরিমাণ ১৮ হাজার ৩১৩ দশমিক ৫ হেক্টর। ৩০ হাজার হেক্টর বাগান থেকে এ মৌসুমে ৩ লাখ ৭৮ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে কৃষি বিভাগ। এর মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ পিস আম ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়েছে। যার পরিমাণ প্রায় ৩ হাজার টন। এর মধ্যে এ বছর ৪৫০ টন আম বিশ্বের বিভিন্ন দেশে পাঠানো হবে। ২০১৪ সালে জেলায় ৯ হাজার ৪৮০ হেক্টর জমি থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ৫২২ টন আম উৎপাদিত হয়েছিল। সেই হিসেবে ১০ বছরের ব্যবধানে জেলায় আমের বাগান বেড়েছে তিন গুণ।

জেলার বৃহত্তর আমের হাট সাপাহারে দেখা যায়, গত দুই সপ্তাহ ধরে সব ধরনের আম সরবরাহ বাড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে এ হাটে মানভেদে প্রতি মণ ল্যাংড়া আম ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকা, খিরসাপাত বা হিমসাগর আম ১ হাজার ৮০০ টাকা থেকে ২ হাজার ৪০০ টাকা, নাক ফজলি আম ১ হাজার ৪০০ থেকে ১ হাজার ৮০০ এবং আম্রপালি ২ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায় কেনাবেচা হচ্ছে। এ চারটি জাতের আমের মধ্যে আম্রপালি জাতের আমের সরবরাহ এবং চাহিদা বর্তমানে সবচেয়ে বেশি। আম সংগ্রহ ও প্যাকেটজাত করাকে কেন্দ্র করে এবার কর্মস্থান হয়েছে হাজারো মৌসুমি বেকার শ্রমিকের। এতে যুক্ত হয়েছে স্কুল-কলেজপড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও। আমের ক্যারেট, পুরনো পত্রিকা, বিভিন্ন প্যাকেট বিক্রিও হচ্ছে দেদার।

দেশের বিভিন্ন জেলার ব্যবসায়ীরা প্রতিদিন সাপাহার থেকে ২ হাজার ৫০০ মণ থেকে ৩ হাজার মণ আম কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। যেখানে একটি উপজেলার ৩০-৩৫টি আড়ত থেকেই প্রতিদিনের বাণিজ্যের পরিমাণ সাড়ে ৪-৬ কোটি টাকা। সাপাহার থেকে কেনা এসব আম প্রতিদিন ১৫০-২০০টি ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জেলায় নিয়ে যাচ্ছেন ব্যবসায়ীরা।

নওগাঁ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘মাটি ও জলবায়ুর বিশেষত্বের কারণে দেশের অন্য অঞ্চলের তুলনায় নওগাঁর আম অনেক সুস্বাদু। যেটাকে নিজেদের ভাগ্য বদলের চাবিকাঠি হিসেবে নিয়েছেন স্থানীয় চাষীরা। অন্য জেলাগুলোয় যখন আমের মৌসুম শেষের পথে তখনও এখানে প্রচুর আম্রপালি আম পাওয়া যায়। আগস্টে ১০-১৫ হাজার টাকা মণ দরে এসব আম বিক্রি হয়। এজন্য প্রতি বছর জেলায় আমের বাগান উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। এ মৌসুমে জেলায় কমপক্ষে ২ হাজার কোটি টাকার আম কেনাবেচা হবে।’

তিনি আরো বলেন, ‘স্বাদে সেরা হওয়ায় দেশীয় সুপার শপে নওগাঁর নিরাপদ আম ব্যাপক সাড়া ফেলেছে। এ বছর ৪৫০ টন আম রফতানি হবে। এজন্য ১ কোটি ২০ লাখ নিরাপদ আম ফ্রুট ব্যাগিং করা হয়েছে। নিরাপদ আম উৎপাদনে চাষীদের আগ্রহ বাড়াতে রফতনিযোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পে ফ্রুট ব্যাগিংয়ের ব্যাগসহ বিভিন্ন প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে চাষীদের।

পাঠকের মতামত: